ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আব্দুল ছালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের কোনো অন্ত নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও জানে এসব অভিযোগ। তারপরও কোনো এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
অনুসন্ধানে জানাজায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুস সালাম ঝালকাঠি সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ প্রায় এক বছর যাবত শূণ্য থাকার পর গত ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যোগদান করেন। কিছুদিন পরেই ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পায়। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি বেপরোয়া হয়ে যায়। সে খাদ্য গুদামে চাকুরি করে হঠাৎ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হয়েছে। তারপর আবার জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পাওয়ার পর তার চোখ উপড়ে উঠেযায়। কয়েকদিনের মাধ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ঠিকাদার,ডিলার ও চালকল মালিকদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন সালাম। বৈঠকে আব্দুস সালাম বলেন,আমি আপনাদের জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি,আমার পার্সেন্টটিজ দিয়ে আপনারা কাজ করবেন। কয়েকদিন পর জেলা শহরের বিভিন্ন ওএমএস ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রে আটা বিক্রয় কার্যক্রম পরির্দশনে গিয়ে তাদের নিকট হইতে মাসিক হারে ৩ (তিন হাজার টাকা) ঘুষ দাবী করেন ও টাকা না দিলে তাদের ডিলার শিপ বাতিল করা হবে। গত ২০১৯ সালে বোরো সংগ্রহ মৌসুমে চালকল মালিকদের সাথে চুক্তির সময় প্রতি কেজিতে ১টাকা হারে প্রায় ১৫ (পনেরো লক্ষ টাকা) প্রহন করেন। এসময় এক চালকল মালিক সজলের নামে ৫টি ভূয়া মিল দেখিয়ে ধান সাটাই ও ক্যারিং বাবদ চালকল মালিক সজলের সাথে চাল দেওয়ার নিয়ে জগড়া বাদে। এই নিয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন,খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা মো.মাজাহারুল আনোয়ার। এখোনো সজলের কাছে ১৪ মেঃ টন চাল পাওনা রয়েছে।
এছাড়াও কৃষকের ধান সংগ্রহের সময় ডব্লিউকিউএসসি স্বাক্ষর করার সময় প্রতি কেজি ধানে ১ টাকা হারে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নেয়। সরকারের বরাদ্দ কৃত হতদরিদ্রদের ডি.ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে গোপনে ক্রয় করে থাকেন। কারণ বর্তমানে এই খাদ্য বাহিরে নিয়ে রাখা যাবেনা। সরকারের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খাদ্যগুদামের ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
জেলা (ভারপ্রাপ্ত) খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুস সালামের বাড়ি ভোলা জেলায় হওয়ার কারনে তার মুখের ভাষা খুবই খারাপ। বিভিন্ন সময় অফিস চলাকালীন সময়ে বা গুদামের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অকথ্য,অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে থাকেন। এ ব্যাপারে অফিসের কর্মচারিরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলো। উক্ত ঘটনায় তার চাকুরি নড়েচরে বসে,উপায় না পেয়ে কর্মচারিদের হাতে পায়ে ধরে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি দাপ্তরিক কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে অযোগ্য। তার অফিসের সহকারী কম্পিউটার কাম মূদ্রাক্ষরিক মোঃ আনছার উদ্দিনের পরামর্শে অফিসিয়াল চিঠিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ন কোন সিন্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও আনছারের কাছে পরামর্শ করে নেয়।
এই আনছার উদ্দিন এর পূর্বে বরগুনা জেলায় কর্মকালীন সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে দূর্ণীতি করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার ফলে বরগুনা জেলার দরপত্রে অংশগ্রহণকারিীদের অফিযোগের ভিত্তিতে পরিচালক প্রসাশন বিভাগ,খাদ্য অধিদপ্ত,ঢাকা‘র টেলিফোনিক নির্দেশ মোতাবেক সে সময়ের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক,বরিশালে তাকে শাস্তিস্বরুপ বরগুনা থেকে ঝালকাঠি জেলায় বদলি করে। কিন্তু ঝালকাঠি জেলায় যোগদানের পর আনছার উদ্দিন আরো বেপরোয়া হয়েপড়ে। সমপ্রতি, ২৩/০৩/২০২০ইং তারিখ ঝালকাঠি জেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) গাজী মাজাহারুল আনোয়ারের গুদামে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ১জন (নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট) সমন্বয়ে তদন্তকালে ঝালকাঠি গ্রেড-১ এলএসডিতে প্রায় ৩৫০ মেঃ টন ধান ও চালের ঘাটতি পাওয়া যায়। সরকারি সম্পত্তি তছরূপ ও জালিয়াতির এত বড় ধরনের বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। যাহার আনুমানিক মূল্য ৯১.০০০০০/-( একানব্বই লক্ষ টাকা)। বোরো সংগ্রহ অভিযানে ধান ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান না কিনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, ধানের টাকা কৃষকের নামে প্রদান না করে একই ওজন মান মজুদ সনদ ৪-৫ জন কৃষকের নামে বিল প্রদান করে। মিল চাতাল ও বয়লার নেই এমন অস্তিত্বহীন মিলের নামে চাল ক্রয়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল গুদাম থেকে প্রদান না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আব্দুল ছালাম জানান,আমার কাজের সকল হিসাব আমার উপরের কর্মকর্তাদের দিয়ে করি। আর আপনারা যে,অভিযোগ বলেছেন,৭টি চালকল মিলের নামে টাকা উঠিয়ে আত্মসাতের কথা ঠিকনা এই টাকা মিলের মালিকরাই উঠিয়েছে। আপনি ধান সাটাই ও ক্যারিং বিল ভাউচার দিয়ে সরকারের প্রায় ৩০লক্ষ টাকা বিভিন্ন মিল মালিকের নামে তুলেছেন? উত্তরে তিনি বলেন,আমরা কোন দূর্নীতি করিনি বা আমাদের এখানে এরকম কিছু হয়না। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো,খাদ্যগুদামের ৩৫০ মে:টন ধান গায়েব হয়েছে সেই ধান কোথায়,উত্তরে তিনি বলেন,এই ৩৫০ মে: ধান মিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে,তারা ধান সাটাই করে চাল জমা দেবেন। আর তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্ত কি দিয়ে চাপা দিলেন এক রাতের মধ্যেই,কেন তদন্ত অব্যহত আছে।
Leave a Reply